স্টাফ রিপোর্টার :
ফেনী সদর উপজেলার লেমুয়া ইউনিয়নের নেয়ামতপুর গ্রামের ভূঞা বাড়ির বাসিন্দা বিবি হাজেরা বেগম (২২)। তার বাবা সুজাউল হক (৫০) ছিলেন ঢাকার চকবাজারের চুড়িহাট্টা মোড়ের অগ্নিকান্ডে ওয়াহেদ মঞ্জিল নামে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্থ ভবনটির নিরাপত্তা প্রহরী। সেদিনের ঘটনায় ভবনটির মধ্যে আটকা পড়ে আগুনে পুড়ে প্রাণ হারান সুজাউল। এ ঘটনায় শুধু বাবাকেই হারাননি হাজেরা। তিনি হারিয়েছেন তার স্বামী মোহাম্মদ ইব্রাহিমকেও (৩২)। ওয়াহেদ মঞ্জিলের উল্টো পাশে রাজমহল হোটেলের সামনের রাস্তায় পান-সিগারেট বিক্রি করতেন তিনি। সেদিন আগুন থেকে প্রাণে বাঁচতে দোকানের ভেতরে ঢুকে ঝাঁপ (শাটার) বন্ধ করে দেন ইব্রাহিম। কিন্তু দোকানটির মধ্যেই আটকা পড়ে পুড়ে মারা যান তিনি।
সদ্য বিধবা হাজেরা এবং তার মা আলেয়া বেগম (৪৬) তাদের স্বামীদের এমন করুণ মৃত্যুতে পাগলপ্রায়।
গত শনিবার সোনাগাজী উপজেলার নবাবপুর ইউপির গোয়ালিয়া গ্রামে সুজাউল হকের বাড়িতে গিয়ে দেখা যায় মা- মেয়ের গগনবিদারী আর্তনাদে ভারী হয়ে উঠেছে এলাকার পরিবেশ। তাদের বিলাপ সেখানে ভিড় করা পাড়া-প্রতিবেশী ও এলাকাবাসীর চোখেও জল এনে দিচ্ছে। শত চেষ্টা ও সান্তনা দিয়েও মা-মেয়ের কান্না থামাতে পারছেন না আত্মীয়-স্বজনরা।
সুজাউল হকের ছেলে নুরনবী জানান, তার বাবা গত তিন বছর ধরে ওয়াহেদ মঞ্জিলের নিরাপত্তা প্রহরীর কাজ করতেন। ভবনটির উল্টোদিকে তার দুলাভাই ইব্রাহিম গত ১০ বছর ধরে পান-সিগারেটের একটি দোকান চালাতেন। পরিবারের অভাব দূর করতে জামাই ইব্রাহিমের মাধ্যমে ওয়াহেদ মঞ্জিলে চাকরি নেন সুজাউল। একসঙ্গে খাওয়া-দাওয়া ও একই কক্ষে থাকতেন শ্বশুর-জামাই। এই অগ্নিকান্ডে ইব্রাহিমের আত্মীয় একই গ্রামের আনোয়ার হোসেনও নিহত হয়েছেন। গত শুক্রবার বিকেলে সুজাউলকে তাদের পারিবারিক কবরস্থানে এবং ইব্রাহিমকে নিজ গ্রামে দাফন করা হয়। সুজাউলের মুখমন্ডল চেনা গেলেও আগুনে পুড়ে ইব্রাহিমের লাশ বিকৃত হয়ে যায়।
নুরনবী বলেন, ‘বুধবার রাতে চকবাজারে আগুন লেগেছে বলে টিভির খবরে দেখতে পাই। কিন্তু বাবা মোবাইল ব্যবহার করতেন না বলে দুলাভাই ইব্রাহিমের মোবাইলে ফোন দিই। কিন্তু দুলাভাইয়ের মোবাইল বন্ধ পাওয়ায় তার সঙ্গে ব্যবসা করা আনোয়ারের নাম্বারে ফোন দিলে সেটিও বন্ধ পাই।’
পরে ওয়াহেদ মঞ্জিলের পাশের আরেক দোকানিকে ফোন দেন জানিয়ে নুরনবী বলেন, ‘তার কাছে জানতে পারি, আগুন লাগার কিছুক্ষণ আগে বাবাকে ওয়াহেদ ম্যানশনের গেটের ভেতর ঝাড়– দিতে দেখেছেন। কিন্তু আগুন লাগার পর থেকে বাবাকে আর দেখতে পাননি কেউ। ওই দোকানি জানান, আগুন লাগার সঙ্গে সঙ্গে দুলাভাই ও আনোয়ার বাঁচার জন্য দোকানের ভেতরে ঢুকে দরজা লাগিয়ে দেন। পরে বৃহস্পতিবার দুপুরে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে তাদের লাশের সন্ধান পাই।’
এদিকে একমাত্র উপার্জনক্ষম ব্যক্তিদের হারিয়ে পরিবার দুটিতে তৈরি হয়েছে অনিশ্চয়তা। সুজাউলের পরিবারে রয়েছে তার স্ত্রী, ছেলে ও তিন মেয়ে। অন্যদিকে ইব্রাহিমের সংসারে রয়েছে তার স্ত্রী এবং দুই মেয়ে মাইমুনা (৬) ও মাহি (৩)। আগামী দিনে কীভাবে চলবে তাদের সংসার, তা ভেবে পরিবারের সদস্যরা হয়ে পড়েছেন দিশেহারা। নিহত ওই দুজনের আয়ের টাকা দিয়ে কোনো রকমে চলে যেত সংসার দুটি। এ পরিস্থিতিতে তাদের ও তার বোনের পরিবারকে আর্থিক সহায়তা দিতে প্রধানমন্ত্রীর প্রতি অনুরোধ জানিয়েছেন নুরনবী।
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
- » বাংলাদেশ সম্মিলিত শিক্ষক সমাজ ফেনী জেলা আহবায়ক কমিটি গঠিত
- » ফেনী বন্ধুসভার বৃক্ষরোপণ ও বিতরণ
- » আমার দেশ সম্পাদকের রত্নগর্ভা মাতা অধ্যাপিকা মাহমুদা বেগমের মাগফিরাত কামনায় ফেনীতে দোয়া
- » গাজীপুরে সাংবাদিক তুহিন হত্যার প্রতিবাদে ফেনীতে সাংবাদিকদের মানববন্ধন
- » ফেনীতে নিষিদ্ধ ছাত্রলীগের সাংবাদিকদের উপর হামলার গোপন পরিকল্পনা ফাঁস
- » জনতার অধিকার পার্টির চেয়ারম্যানের উপর হামলা, সংবাদ সম্মেলন
- » ফেনী পৌর বিএনপির সদস্য নবায়ন কর্মসূচি উদ্বোধন
- » ফেনীতে হেফাজতের দোয়া মাহফিলে আজিজুল হক ইসলামাবাদী- ‘আলেম সমাজ ঐক্যবদ্ধ থাকলে দেশে আর ফ্যাসিবাদ সৃষ্টি হবে না’
- » ফেনীতে হাফেজ তৈয়ব রহ. স্মরণে দোয়ার মাহফিল
- » ছাত্র জনতার ঐতিহাসিক গণঅভ্যুত্থানের বর্ষপূর্তিতে ফেনীতে বিএনপি’র বর্ণাঢ্য বিজয় মিছিল, সমাবেশ “গণহত্যার দ্রুত বিচার ও অবৈধ অস্ত্র উদ্ধারের দাবি”